মেয়েটি ছিল অনেক চঞ্চল।প্রজাপতির মতো।বন্ধু, আড্ডা ,মাস্তি নিয়ে
থাকতো।এটা মেয়েটির বাইরের দিক।ভেতরে মেয়েটি ছিল অসম্ভব চাপা। খুব
অভিমানী। মেয়েটি ভালবাসতো গান শুনতে,গল্পের বই পড়তে, মুভি দেখতে।ভালবাসতো
শাড়ি পরতে, ,হাতে অনেক চুড়ি পরতে । মেয়েটির নাম ছিল ইশরাত।
ছেলেটি ছিল খুব রাগী। একটুতেই রেগে
যেত । কিন্তু বন্ধুদের জন্য জান দিতে প্রস্তুত থাকতো। আড্ডা,দুষ্টামি
নিয়ে সেও মেতে থাকতো। এটা ছেলেটির বাইরের দিক।ভেতরে ছেলেটি ছিল অসম্ভব
দুষ্টু। রাগী ,বদমেজাজি। ছেলেটি গান ভালবাসতো,লেখালেখি করতো।অসম্ভব ক্রিকেট
পাগল ছিলো। ছেলেটির নাম আদনান আদি ।ও ,,ছেলেটি বিবিএ তে এবং মেয়েটি
ইন্টারে পড়তো। বলা হয় নি।মেয়েটি গানও গাইতো।
একদিন হুট করে ফেসবুকে
তাদের পরিচয় হয়ে গেল। ছেলেটির একটি গল্প মেয়েটির অনেক ভাল লেগে গেল।
গল্পের শেষে ছেলেটির নাম দিয়ে খুঁজতেই পেয়ে গেল।রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে
দিলো।মেয়েটি জানতো ছেলেটি
যেহেতু সেলিব্রেটি। তার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট হবে না ।
মেয়েটি অবাক হয়ে গেল এক্সেপ্ট করা দেখে। প্রথম মেসেজ ছেলেটি করেছিল।
-হাই
-হ্যালো
-আমি কি আপনাকে চিনি?
-না
-আপনি?
-না
-তাহলে রিক?
-আপনার মেহেরজান গল্প আমার খুব ভাল লেগেছে। তাই।
-ও আচ্ছা, আমি আদনান আদি।
-আমি ইশরাত ।
আদি আর ইশরাত খুব তাড়াতাড়িই রিলেশনে জড়িয়ে যায়। আদনানের ছিল
এটি দ্বিতীয়। আর ইশরাতের প্রথম।
কেউ যদি বলে কে কাকে বেশি ভালবাসতো? তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা বের করতে তার মাথার চুল পাকিয়ে ফেলতে হবে।
ওদের প্রথম দেখা হয় স্টেশনে।ওহ। বলা হয় নি। দুজন কিন্তু দুই শহরে থাকতো ।
সেদিন ছিল মেঘলা আকাশ। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো।মেয়েটি দেখা করেছিল
ছেলেটির সাথে। মেয়েটির ফেরার তাড়া ছিল। তাই খুব অল্প সময় নিজেদের জন্য
পেয়েছিল। কেউই কোনো কথা বলতে পারে নি। বলবে কি করে?ভাললাগাতেই বুঁদ হয়ে
ছিল দুজনে।
ওদের প্রায় প্রতিদিন ঝগড়া হতো। মেয়েটি নিয়ম মানতে চাইতো
না। ছেলেটি আবদ্ধ করেছিল মেয়েটিকে নিয়মের শৃং্খল পরিয়ে। মেয়েটির ইচ্ছা
অনিচ্ছা কিচ্ছু ছিল না। ছেলেটি যা বলতো তাই শুনতে হতো মেয়েটিকে। মেয়েটি
মেনেও নিয়েছিল। ভালবাসতো যে।
ধীরে ধীরে মেয়েটি গুটিয়ে গেল নিজের
মাঝে।শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়। মেয়েটি প্রজাপতি থেকে শুঁয়োপোকা হয়ে
গেল।কোনো আড্ডায় যেত না,লাইব্রেরি তে যেত না। এমনকি কোনো আত্মীয়র
বাসাতেও যেত না। আর খুব দরকার হলে ছেলেটির কাছে অনুমতি চাইতো।মাঝে মাঝে
মেয়েটি বিদ্রোহী হয়ে উঠতো। কিন্তু আবার চুপ করে যেত।ভালবাসতো যে ।
মেয়েটি ছেলেটিকে সবসময় বলতো, 'তুমি অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে রিলেশনে
জড়িয়ো। আমার কোনো প্রব্লেম নেই '। ছেলেটি চুপচাপ শুনতো। মেয়েটি কখনো
ছেলেটির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নি। এক সময় বকা দিলেও মেয়েটি চুপ থাকা
শিখে যায়। যখন একটুও আর সহ্য করতে পারতো না, তখন শুধু বলতো, 'আমি থাকবো
না একসময়, তখন বুঝবা। তোমাকে আমি তোমার থেকেও ভাল বুঝি। এতটা অন্য কোনো
মেয়ে বুঝবে না '।
ছেলেটির কাছে মেয়েটি কিচ্ছু চাইতো না। শুধু চাইতো
ব্যস্ত ছেলেটি তার হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে পাঁচটা মিনিট সময় দিক।
ব্যস্ত ছেলেটির এই সময়টুকুই ছিল না।
যখন ছেলেটি সরি বলতো। বলতো, 'তুমি
কি দু:খ পেয়েছ?"মেয়েটি মৃদু হেসে বলতো, 'আমি ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি।
এত সহজে আমার দু:খ, কষ্ট লাগে না '।ছেলেটি বুঝতেও পারতো না। অভিমানী
মেয়েটি দিন দিন তার থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছে।
মেয়েটির ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। ছেলেটি তখন বিবিএ থার্ড ইয়ার। মেয়েটির একদিন বলল, 'আদনান,একবার দেখা করবা, প্লিজ?এই
শেষ। ' দেখা করলো। তিনবছরের রিলেশনে দ্বিতীয় দেখা। মেয়েটি হাতে অনেক
সময় নিয়ে এসেছিল। সারাদিন অনেক অনেক কথা হলো,গল্প হলো। যাওয়ার সময়
মেয়েটি বলল,'তুমি আগে চলে যাও।আমার ট্রেন আসতে দেরী হবে '।ছেলেটি চলে গেল।
ছেলেটি যদি তাকাতো পেছনে, দেখতো মেয়েটির কান্নার রং নীল।
গল্পটা
এখানেই শেষ। মেয়েটি আর বাসায় ফিরে যায় নি। নম্বর বন্ধ। মেয়েটির তো
আসলেই কেউ ছিল না। ঘরে সৎ মা আর বাবার অত্যাচার। যাকে ভালবেসেছিল সেও তো
কখনো বুঝতে চায়নি মেয়েটিকে ।ব্যস!
পিছুটানহীন মেয়েটি কোথায় হারিয়ে গেল। কেউ যদি কখনো দেখ, মেয়েটিকে
চিনতে পারবে। চোখের মায়া আর ঠোঁটে মোহিনী হাসি লেগেই আছে। কিন্তু
মেয়েটির চোখের গভীরতা মাপতে যেও না। বিষণ্ণ সেই অতলান্তির । শুধু অতলান্তি বিষণ্ণ মেয়েটির
কাছে একবার যেয়ে বোলো, 'ভালবাসি'।!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!